প্রকাশিত: ০৮/০৬/২০১৬ ১০:০১ পিএম

karaবেলাল আজাদ::
মায়ানমারের (বার্মা) সীমান্তবর্তী কক্সবাজার,বান্দরবান ও চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী মায়ানমারের (বার্মা) বার্মিজ নাগরিকরা স্থানীয় বন্দীদের কাছে “জানখালাসী” বলেই পরিচিত! মৃত্যূর আগ্ পর্যন্ত তাদের কারামুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ হওয়ায়, কারাগারে তারা আমৃত্যূ কারাবন্দী বা ‘জানখালাসী’ বলেই বিবেচ্য। কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে এ ধরণের অনির্দিষ্টকালীন বা আমৃত্যূ কারাবাসীর (জানখালাসী) সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক।

মায়ানমার(বার্মা) সরকারের দমনমূলক নীতি ও সংখ্যাগুরু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিপীড়নের মুখে মায়ানমারের আরকান রাজ্য থেকে অত্যাচারিত-বিতাড়িত হয়ে প্রাণ বাচাঁতে এসব সংখ্যালঘু মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা প্রায়ই বাংলাদেশে আশ্রয় পেতে চেষ্টা করে বাংলাদেশে অনূপ্রবেশ করে বাংলাদেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে এবং বৈদেশিক নাগরিক আইন ও পাসপোর্ট আইনস হ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে কারান্তরীণ হয় তারা। এদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশের আদালত কর্তৃক প্রাপ্ত দন্ড ভোগের (সাজাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া) পরেও বছরের পর বছর, যুগ যুগ ধরে কারাগারেই বন্দি মানবেতর দিনাতিপাত করছে। একমাত্র মৃত্যূ ছাড়া তাদেঁর কারা মুক্তির আশা একেবারেই ক্ষীণ। এদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও শিশুও রয়েছে। অনেকেই কম বয়সে কারাগারে বন্দি হয়ে বর্তমানে প্রাপ্ত বয়সে পদার্পণ করেছেন।তাদের কোনো দেশের নাগরিকত্ব বা শরণার্থী হিসেবে জাতিসংঘ ঘোষিত মর্যাদা না থাকার কারণে মুক্তি বা কোথাও পাঠানোর ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
বন্দিদের মধ্যে অন্যতম মায়ানমারের কেন্ডন জেলার বুচিডং থানার জুপরা গামের মৃত এয়াকুব আলী পূত্র সুলতান আহমদ (৫৫) গত ১৯৯৭ সালে পার্বত্য বান্দরবানের লামা থানা পুলিশের হাতে গেফতার হলে তার বিরুদ্ধে বৈদেশিক নাগরিক আইন’১৯৪৬ এর ১৪ ধারায় (জি.আর-১১/৯৭) মামলা হয়। পরে সুলতান আহমদ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তি দিলে লামা থানা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত কর্তৃক ১৯৪৭ সালের বিদেশি আইন এর ১৪ ধারায় ৫০০ টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ড পান। ২৬ এপ্রিল ৯৯ ইং তারিখ থেকে সাজা ভোগ করে ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ তারিখে তার মুক্তি পাওয়ার কথা। অথচ ০৯/৯/৯৯ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ বছর বা এক যুগেরও বেশি সময় কারাভোগ করতে হচ্ছে তাকে।
একই ভাবে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আরাকান প্রদেশের রাজধানী আকিয়াব অঞ্চলের মংডু থানাধীন মায়াদি গ্রামের আবুল হোসাইনের পুত্র হাফেজ আহমদ (২১) এর সাজার মেয়াদ ১৮/৭/০১ তারিখ শেষ হয়। তিনি পাসপোর্ট আইনের ৩(৩) ধারায় ৩ মাসের কারাদন্ড ভোগ করার পরও আজ পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর যাবত কারাভোগ করে আসছেন।
কারাবন্দি মো: জালাল (৩০), পিতা: উলা মিয়া ৩১/১০/০৫ইং তারিখ মুক্তি পাওয়ার কথা, একইভাবে আবদুর রহিম (৩৮), পিতা: খলিলুর রহমান ২২/০৬/০৬ইং, মোহাম্মদ ইউছুফ আলি (৩৮), পিতা: কালা মিয়া ৩১/০৭/০৭ইং, বশির আহমদ (৩৪), পিতা: মৃত ছৈয়দ করিম এর ৩০/০৬/০৮ইং, নুর আলম (৩০), পিতা: মরহুম আব্দুর রহমান ২৪/০৬/০৭ইং, শাহ মিয়া (১৫), পিতা: মৃত জালাল আহমদ ২৪/০৬/০৭ইং, আবুল হাশিম (২৫), পিতা: মৃত কাশিম ৩০/০৬/০৮ইং, মোহাম্মদ রফিক (২২), পিতা: ছরি হোছাইন ৩০/০৬/০৮ইং, মোহাম্মদ হোছাইন (২৩), পিতা: মৃত হামেদ হাছান ৩০/০৬/০৮ ইং, টিং অং (৪৬) পিতা: ট্যাং চংক ১৮/১২/০৭ইং, লা-লো (৪৬), পিতা: মৃত তাচেং ১৫/০৮/০৮ইং, মং তোয়া অং রাখাইন (২৯), পিতা: মৃত শত্রু রাখাইন ২৯/৭/০৮ইং, আনোয়ার ইসলাম (৩৪) পিতা: কালা পুতু ৩০/০৯/০৯ইং, কিয়ং গাফ রাখাইন (২৬), পিতা: চৌং রাখাইন ০৮/০১/০৮ইং, মোহাম্মদ সেলিম (২০), পিতা: আবুল জাফর ২৮/০৬/১০ইং, আলি আকবর (২০), পিতা: মৃত ইউছুপ আলি ২৬/০৩/০৫ইং, আবু তৈয়ব (২৭), পিতা: মৃত আবু বক্কর ২৮/০৬/১০ইং, সোনা মিয়া (৩৫) পিতা: আব্দুল হোছাইন ২৮/০৬/১০ইং, আবুল কালাম (৩৩), পিতা: আমান উল­্যা ২৮/০৬/১০ইং, নুর ইসলাম (২৮), পিতা: আবুল হাশেম ২৮/০৬/১০ইং, মোহাম্মদ রফিক (২৯), পিতা: মো: ওয়ায়িছ ২৮/০৬/১০ইং, মো: শুভ আলম (২৬), পিতা: বদি আলম ২৮/০৬/১০ইং, রহমত আলি (২৬), পিতা: মো: মনির আলম ২৮/০৬/১০ইং, নুর মোস্তফা (২৫), পিতা: আনু মিয়া, ২৮/০৬/১০ইং, মো: রফিক (২৭), পিতা: ছৈয়দ আলম, ২৮/০৬/১০ইং, আবুল হোছাইন (২৭), পিতা: কালামিয়া, ১৯/১১/০৯ইং, রশিদ উল্লাহ (২৭) ২৭/০১/১০ইং, আমান উল্লা (২৫) ২৭/০১/১০ইং, আরাফাত উল্লাহ (২৫) ২৭/০১/১০ইং, মোহাম্মদ সেলিম (৩২) ২৬/০৫/১১ইং, আজগর হোছাইন (৪৫) ২০/০৪/১১ইং, লেদু মিয়া (৪৮) ২০/০৪/১১ইং এবং নারী বন্দি সায়েদা ওয়াই-এর (২০) গত ০৩/০৮/২০১০ ইং তারিখে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত (ডবলমুরিং থানার সাধারণ ডায়েরি নম্বর ৪০৩, ০৮/০৬/২০০৯) এই নারীকে ০৮/০৮/২০১০ তারিখে মুক্তির আদেশ দিলেও আজও মুক্তি মেলেনি তার। একইভাবে উপলা খুমি (২৭), ০১/১১/১০ইং ও হাই ট্যোং (৪৫) পিতা: লেই চ্যুং-এর ১০/০২/১০ তারিখে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।

মানবাধিকার সংস্থা বিএইচআরএফ’ তাদের নিজস্ব কাজের অংশ হিসাবে নারী ও শিশু কারাবন্দিদের মানবাধিকার বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান চালাতে গিয়ে জানতে পারে দণ্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান সহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে বছরের পর বছর যুগ যুগ ধরে বার্মিজ নাগরিক প্রায় ৫ শতাধিক কারাবন্দি।

“কারাগারে বিনা বিচারে বছরের পর বছর যুগ যুগ ধরে আটক রাখা বার্মিজ নাগরিক বন্দীদের মুক্তি দিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে অথবা জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মাধ্যমে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে ” গত ২০১২ ইং সনে মানবাধিকর সংগঠন বিএইচআরএফ’র সংগঠক অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন মহামান্য হাইকোর্টে একটি আবেদন (রিট) করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, এসব বন্দিকে একদিকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকার নাগরিক বলে স্বীকার করে না অন্যদিকে এদের শরণার্থীর মর্যাদাও দেয়া হয় না।
এরা রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত । তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত বাংলাদেশের ওপর এরা বাড়তি চাপ হওয়া এবং মানবিক কারণে বিষয়টির নিষ্পত্তি দরকার। মহামান্য হাইকোর্টের বিচারক হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মো: জাহাঙ্গীর হোসেনের যুগ্ম বেঞ্চ সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সর্বমোট ১১ জনকে জবাব দিতে রুল জারি করেন।কিন্তু রুলটি আপীল বিভাগে গিয়েই শেষ, কার্যতঃ কোন ফল মেলেনি। মুক্তি মিলেনি অনির্দিষ্টকাল কারাগারে বন্দি মায়ানমারের (বার্মা) নিপীড়িত-বিতাড়িত “জান খালাসী”দের॥

পাঠকের মতামত

বান্দরবানে কেএনএফের আস্তানায় যৌথ বাহিনীর অভিযান, নিহত ৩

বান্দরবানের রুমা উপজেলার রনিন পাড়ার কাছে ডেবাছড়া এলাকায় কেএনএফের একটি আস্তানায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর ...

সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারী পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক ১

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে উত্তীর্ণ হলেও মৌখিকে ধরা ...